প্রকাশিত: Wed, Dec 7, 2022 9:10 PM
আপডেট: Wed, Feb 5, 2025 9:55 PM

কেন মুসলিম সভ্যতা গত ৭৫০ বছরে বিশ্বমানের একজনও সুপণ্ডিত সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে?

রাজিক হাসান: কেন মুসলিম সভ্যতা গত ৭৫০ বছরে বিশ্বমানের একজনও সুপণ্ডিত সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে? বিষয়টি নিয়ে মুসলমানেরা কি কখনও ভেবেছেন? শুনে অবাক হতে হয় যে ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়া মুসলমানদের হাতে। কী আশ্চর্য তাই না? মুসলমানেরা যখন স্পেনের কর্ডোবা দখল করেছিল তখন তারা  সেখানে আজহারের অনুকরণে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ল। যাঁরা সেখানে পড়ালেখা করল তাঁদের অনেকেই পরবর্তীতে প্যারিস য়ূনিভার্সিটির গোড়াপত্তন করল। এবং প্রথম দিককার পাঠ্যপুস্তক গুলো পর্যন্ত আরবী বই থেকে লাতিনে অনুবাদ করা। আজ আর আজহারের নাম কেউ করে না, করে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ মুসলমানদের সৃজনী শক্তি খুব দ্রুত ফুরিয়ে গেল। তারা একসময় বুঝে গেল, তাঁদের সব কিছু করা হয়ে গেছে, নতুন করে কিছুই আর করবার নেই। তারা পুরানো পুঁজি ভেঙে খেতে শুরু করল। তারা নতুন করে কিছু শিখতেও অস্বীকৃতি জানালো। তারা অহংকারী হয়ে উঠলো। নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবা শুরু করল। পরকালের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইহকালকে অবজ্ঞা করতে লাগলো। তাই ইহকালের জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে ক্রমেই পিছিয়ে গেল। ধর্মকর্ম পালনের মাধ্যমে নিশ্চিত ক্ষমা পাবার স্বপ্নে বিভোর হল।

নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকে ইসলামের স্বর্ণযুগে বিজ্ঞান, দর্শন অথবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একমাত্র যারা বিশ্বমানের কাজ করেছিলেন তারা ছিলেন মুসলিম। মধ্যযুগের শক্তিশালী মুসলিম সভ্যতাই প্রাচীন জ্ঞানকে সংরক্ষন করে আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি বানিয়ে দেয়।  মুসলমানেরা শুধু প্রাচীন জ্ঞানের সংরক্ষণই করে নি তারা বিপুল পরিমাণ উদ্ভাবনও করেছেন। সেই স্বর্ণালী ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলা মুসলমানদের জন্য আজ এক ট্রাজিক ঘটনা।

আজ এটাই কঠিন বাস্তবতা, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে মুসলিম সভ্যতা অনেক পিছিয়ে। ১৩ শতকে আব্বাসী ডাইনাস্টি পতনের পর তারা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই মুসলিম রক্ষণশীলতার পুনর্জাগরণ ঘটে। মুসলমানেরা অলৌকিকভাবে প্রকাশিত বিষয়কে যুক্তির উপরে এবং নিয়তিবাদকে মুক্তচিন্তার উপরে স্থান দেয়। তারা গণিত শাস্ত্রকে ইসলামবিরোধী বলে চিহ্নিত করে, নিশ্চিত করে বিষয়টি মনে উন্মত্ততা জাগিয়ে বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। তারপর থেকেই লেখক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী সহ অন্যান্য পণ্ডিতদের বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত সৃষ্টিশীল চিন্তা ও কাজ। ফলে মুসলমানেরা ক্রমেই পিছিয়ে যায় পশ্চিমা সভ্যতা তথা আধুনিক দুনিয়া থেকে।

চিন্তার এই বন্ধ্যাত্বের কারণেই আজ সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের অবস্থা শোচনীয়। তারা দরিদ্র, অশিক্ষিত ও কান্ডজ্ঞানহীন। ১৫০ কোটি মুসলমানদের জন্য বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যদিও এদের দম্ভ দেখে স্তম্ভিত হতে হয়। “আন্তর্জাতিক হিফজ কোরান প্রতিযোগিতায় সারা পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশের শিশু “তাকরীম”— এমন একটি খবর গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। শঠ মানুষেরা নানা শঠ মতলবে শিশুটির এ অর্জনকে ওয়েপোনাইজ করেছে। কৌতুহল থেকে সামান্য অনুসন্ধান করে দেখলাম, এখানে একটি বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকি লুকিয়ে আছে। বলা যায় এটি একটি গুরুতর মিডিয়া প্রতারণা। আমাদের শিশুটি ওই প্রতিযোগিতায় একটি পুরস্কার পেয়েছে, কিন্তু এটি মোটেও ‘হিফজুল কোরান প্রতিযোগিতায় সারা পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান’ অর্জনের পুরস্কার নয়।

কেন এই মিডিয়া প্রতারণা? উত্তর হল হীনমন্যতা থেকে। সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের নিয়ে জনগণের সর্বব্যাপ্ত উল্লাস দেখে ওরা ভীত হয়েছে। নিজেদের পরাজিত ভেবেছে। তাহলে এটা কি পরাজয়ের প্রতিশোধ?  দুটো প্রতিযোগিতা তো কোন মাপকাঠিতেই এক নয়। তাহলে ? উত্তর হল এটা ওদের হীনমন্যতায় ভোগার ফল। তারা জানেনা এভাবে কখনো  মানসিক দীনতা ঘোচেনা।  গ�ানি মোচন তো দূরের কথা। হীনতা নিয়ে বসবাস যাদের তারা কিভাবে  মহৎ গৌরবের অংশীদার হবে ? মহত্ত্ব / গৌরব এই দুটো উপলব্ধি মোল্লতন্ত্রীদের থাকতে নেই। থাকার কথাও নয়।

নব জাগরণ, সংশোধন এবং বোধোদয় বা এনলাইটমেন্ট এই তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মুসলমানরা যতদিন না যাবে, কোন আশায় নেই তাদের এই দুরাবস্থার পরিবর্তনের। আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বঞ্চিত থাকার কারণে ১৫ শতক হতে মুসলমানেরা পশ্চিমা দুনিয়ার পদতলে, যখন থেকে অটোম্যানদের পতন ঘটে পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে। সহজেই অনুমান করা যায়, একই কারণে মুসলমানেরা পুনরায় বর্তমান দুনিয়ার রাইজিং সুপার পাওয়ার চায়না এবং ভারতীয় আধিপত্যের অধীন হতে চলেছে পরবর্তী ৫০০ থেকে ১০০০ বছরের জন্যে। ফেসবুক থেকে